রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এক অনুসন্ধান কাউন্টারের ওপরের স্ক্রিনে হঠাৎ পর্নো ভিডিও চালু হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্টেশনে উপস্থিত যাত্রী এবং আশপাশের মানুষদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্রবেশপথের মনিটরে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ লেখা স্ক্রল উঠেছিল। সেই ঘটনার পর ডিসপ্লে বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর গত ১৪ ডিসেম্বর খুলনা রেলস্টেশনে ‘শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসবে’ এমন লেখা প্রদর্শিত হয়েছিল।
কমলাপুর স্টেশন সূত্র বলছে, রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ অনুসন্ধান কাউন্টারের ওপরের মনিটরে পর্নো ভিডিও চলা শুরু হয়। এ সময় সেখানে থাকা যাত্রী ও অন্যরা বিব্রত হয়ে পড়েন। উপস্থিত লোকজন মনিটরটি বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে এক ব্যক্তি পাথর ছুড়ে মনিটর ভেঙে ফেলেন!
রেলস্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত ২টার পরে ডিসপ্লে বোর্ডে যেখানে ট্রেন নম্বর থাকে, তার পাশে অনুসন্ধান বোর্ডে কিছু পর্নো ছবি চলতে থাকে। কে বা কারা এ কাজ করেছে, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগেও একবার আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ লেখা উঠেছিল। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এখন প্রযুক্তি এমন হয়েছে যে স্মার্টফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে মনিটর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এমন ভিডিওটি চালানো হয়েছিল।’
কমলাপুর রেলস্টেশনে বিব্রতকর এই ঘটনার পর দ্রুত তদন্তে নেমেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তারা।
মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, ‘এর আগে একবার স্ক্রিনে “আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ” ভেসে উঠেছিল, এর পর থেকে ওই ডিসপ্লে বোর্ড সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। এবার যে স্ক্রিনে এই বিব্রতকর ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেটি মূলত সময়সূচি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সহজ ভিনসেন্ট কোম্পানির তৈরি। আমরা ইতিমধ্যে তাদের চিঠি দিয়েছি, যাতে ডিসপ্লেতে কোনো অননুমোদিত কিছু না আসে। তবে এত সুরক্ষার পরও এমন কিছু কীভাবে হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
মহিউদ্দিন আরিফ জানান, রেলের পক্ষ থেকে আগেই বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এই বিষয়ে সহজ-এর প্রধান নির্বাহী সন্দীপ দেবনাথের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘বাইরে থেকে কোনো ডিভাইস দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ লোক ছাড়া এটা অসম্ভব।’
খুলনার উদাহরণ টেনে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘খুলনারটা তদন্ত করে জানা গেছে, এগুলো ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত কোনো ডিভাইস না। এটা সম্পূর্ণ রূপে ইন হাউস বা ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটা মাইক্রোকন্ট্রোলার-ভিত্তিক অফলাইন এলইডি পদ্ধতি। এটা বাইরে থেকে করার কোনো সুযোগ নেই।’